শিরোনাম: একটি শেষ বিকেলের গল্প
নন্দিনী আর আয়ানের পরিচয়টা খুব অদ্ভুতভাবে হয়েছিল। ট্রেনের এক ছোট্ট যাত্রায়, দুজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষ, কিন্তু প্রথম দেখাতেই তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত সংযোগ তৈরি হয়েছিল। আয়ান কাজের কারণে প্রতি সপ্তাহে এই ট্রেনে যাতায়াত করত, আর নন্দিনী ছিল এক ভ্রমণপ্রেমী মেয়ে, যে একা একা নিজের মতো করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত।
সেই বিকেলে, ট্রেনটা যখন একটা ছোট্ট স্টেশনে থেমেছিল, তখন নন্দিনী আয়ানের সামনে এসে বসে। আয়ান নিজের খেয়ালে বসে ছিল, কিন্তু নন্দিনীর উপস্থিতি তার মনোযোগ কেড়ে নেয়। তার মুখের হাসি আর চোখের অদ্ভুত আকর্ষণীয় গভীরতা আয়ানের মনকে অস্থির করে তোলে। তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসল, যেন চেনা মানুষের মতো।
ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পরে, নন্দিনী হঠাৎ করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল, "আপনি কি রোজ এই ট্রেনে চলাচল করেন?"
আয়ান একটু বিস্মিত হয়ে জবাব দিল, "হ্যাঁ, কাজের জন্য। আর আপনি?"
নন্দিনী হাসি দিয়ে বলল, "আমি তো ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। আজ একটু অন্যদিকে যাচ্ছি, তাই এই ট্রেনটায় উঠে পড়লাম।"
এরপর তাদের মধ্যে কথোপকথনের ঢেউ বইতে থাকে। দুজনের মধ্যে কথার কোনো অভাব ছিল না। আয়ান অবাক হয়েছিল, এত সহজে সে কীভাবে একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের সঙ্গে এতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। নন্দিনীর জীবনদর্শন, তার স্বপ্নগুলো আর মুক্তচিন্তা আয়ানকে মুগ্ধ করেছিল। আয়ানও তার নিজের জীবনের গল্প বলছিল, কাজের চাপে বন্দি থাকা জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
কথার মাঝে তারা কখন যেন ট্রেনের শেষ স্টেশনে পৌঁছে যায়। নন্দিনী হঠাৎ বলল, "আপনার সঙ্গে গল্প করতে করতে কখন যে সময় কেটে গেল, বুঝতেই পারলাম না!"
আয়ান একটু থেমে বলল, "আমিও বুঝতে পারিনি। কিন্তু এই গল্পটা কি এখানেই শেষ হবে?"
নন্দিনী মুচকি হেসে বলল, "কিছু শেষ হয় না, যদি আমরা চাই। আপনি কি আমাকে আরেকটা কফির জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন?"
আয়ানের চোখে এক অদ্ভুত আনন্দের ঝিলিক দেখা গেল। "অবশ্যই, আগামী শনিবার আপনি কি ব্যস্ত?"
নন্দিনী হেসে বলল, "ব্যস্ত? আপনার সঙ্গে আরেকবার দেখা করার জন্য আমার কোনো ব্যস্ততা নেই।"
আয়ান সেই মুহূর্তে বুঝতে পারল, তার জীবনে নতুন একটি অধ্যায় শুরু হয়েছে। সেই ট্রেনের ছোট্ট যাত্রা, যে যাত্রা শুরু হয়েছিল একজন অপরিচিত মানুষের সঙ্গে, সেটি এখন তাকে এক নতুন ভালোবাসার দিকে নিয়ে চলেছে।
সেই শনিবারে, তারা আবার কফি শপে দেখা করল। নন্দিনীর কথা আর আয়ানের চুপচাপ শোনা, তাদের মধ্যে যেন এক নতুন জগতের সৃষ্টি করেছিল। প্রতিটি মূহুর্তে তারা একে অপরের কাছে আরও বেশি গভীর হয়ে উঠছিল। নন্দিনীর হাসি, আয়ানের চিন্তাশীলতা — সবকিছু মিলিয়ে তাদের সম্পর্কটা যেন প্রকৃতির এক অসাধারণ সৃষ্টি।
আয়ান একসময় বলল, "নন্দিনী, আমাদের দেখা হওয়াটা কি শুধুই একটা কাকতালীয় ঘটনা?"
নন্দিনী একটু ভেবে বলল, "হয়তো। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, কিছু কাকতালীয় ঘটনাই আমাদের জীবনে সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করে।"
আয়ান মৃদু হেসে বলল, "তাহলে আমাদের এই গল্পটা কি চলতে থাকবে?"
নন্দিনী গভীরভাবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, "এখন এটা তোমার ওপর নির্ভর করছে।"
সেই মুহূর্তে আয়ান বুঝতে পারল, সে তার উত্তর খুঁজে পেয়েছে। এই গল্পের কোনো শেষ নেই, যতদিন তারা একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করবে।